হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :> এবারে রাবেতা বোর্ড সেরা দুইজনই লেদা ইবনে আব্বাস মাদ্রাসার ছাত্র। তারা হলেন জমাতে নাহুমে হাফেজ মাহিদুর রহমান (১৮) এবং জমাতে হাপ্তমে মো. আরিফ (১৭)। তাছাড়া সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে উক্ত মাদ্রাসার ৩০ জন শিক্ষার্থী।
জমাতে নাহুমে বোর্ড সেরা হাফেজ মাহিদুর রহমান টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব মহেষখালীয়াপাড়ার বাসিন্দা কবির হোছন ও ফিরোজা বেগমের পুত্র। ৬ ভাই ৬ বোনের মধ্যে মেধাবী শিক্ষার্থী হাফেজ মাহিদুর রহমান ১১তম সন্তান। সে লেখাপড়া করে ভবিষ্যতে একজন দক্ষ মুফতী হতে আগ্রহী। সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম হওয়া হাফেজ মাহিদুর রহমানের রেজি. নম্বর ৭৪। প্রাপ্ত নম্বর ৫৯৩।
জমাতে হাপ্তমে বোর্ড সেরা মো. আরিফ উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ইমামেরডেইল গ্রামের মাও. মো. ইউসুফ ও মমতাজ বেগমের পুত্র। ৪ ভাই ৩ বোনের মধ্যে মেধাবী শিক্ষার্থী মো. আরিফ ৪র্থ সন্তান। পিতা মাও. ইউসুফ উপজেলার প্রাচীণতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্টান ইনানী মাদ্রাসায় দীর্ঘ বছর ধরে শিক্ষা বিভাগ (নাজেমে তা’লীমাত) পরিচালক হিসাবে কর্মরত। বড় ভাই মাও. মোহাম্মদ বর্তমানে ডিগলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসাবে কর্মরত এবং আরেক ভাই আজিজ নূর ইনানী মাদ্রাসায় জমাতে শশুমে অধ্যয়নরত। সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম হওয়া মো. আরিফের রেজি. নম্বর ৪৭। প্রাপ্ত নম্বর ৫৮৬। সে একজন দক্ষ মুহাদ্দিস ও মুফতী হতে ইচ্ছুক।
জমাতে নাহুম ও জমাতে হাপ্তম নিয়ে গঠিত রাবেতাতুল মদারিস আল-ইসলামিয়া কক্সবাজার আঞ্চলিক বোর্ড। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা ইবনে আব্বাস (রা.) আল-ইসলামিয়া মাদ্রাসা বোর্ড পরিক্ষায় এবারও চমক সৃষ্টি করে সফলতার ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখেছে। মাদ্রাসাটি ২০০৩ ইংরেজীতে প্রতিষ্টা লাভ করে প্রতিষ্টাতা পরিচালক আলহাজ্ব মাও. ক্বারী শাকের আহমদের অক্লান্ত পরিশ্রম, কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারীদের আন্তরিকতায় অত্যন্ত সুনামের সহিত লেখাপড়া চালিয়ে আসছে। এ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বোর্ড, সনদ, কেন্দ্রীয় ও প্রতিযোগিতামুলক বিভিন্ন পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করে অসাধারণ মেধার পরিচয় দিয়ে আসছে।
রাবেতা বোর্ড এবারে জমাতে হাপ্তমে ৩৫ জনকে এবং জমাতে নাহুমে ৬৪ জনকে সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান দিয়েছে। জমাতে হাপ্তমের ৩৫ জনের মধ্যে প্রথমসহ ১১ জন এবং জমাতে নাহুমের ৬৪ জনের মধ্যে প্রথমসহ ১৯ জনই লেদা ইবনে আব্বাস (রা.) মাদ্রাসার ছাত্র। উক্ত দুই জমাতে সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া মোট ৯৯ জনের মধ্যে ৩০ জনই লেদা ইবনে আব্বাস (রা.) মাদ্রাসার ছাত্র।
রাবেতা বোর্ড : সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে ৩০ জন
শা’বান মাসে অনুষ্টিত নাহুমের রাবেতাতুল মাদারিস কেন্দ্রীয় পরিক্ষায় এবারে দুই জমাতের ৫০৫ জন পরিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে জমাতে হাপ্তুমের ১৮১ জন এবং জমাতে নহুমের ৩২৪ জন। পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারী মোট প্রতিষ্টানের সংখ্যা ৩১টি। তম্মধ্যে উভয় জমাতে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্টান ১৮টি এবং শুধু নহুম জমাতে অংশগ্রহণকারী মাদ্রাসা ১৩টি।
জমাতে হাপ্তুমে বোর্ড সেরা সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া ৩৫ জনের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকারী মো. আরিফসহ ১১ জনই লেদা ইবনে আব্বাস (রা.) আল-ইসলামিয়ার ছাত্র। এরা হলেন প্রথম মুহাম্মদ আরিফ, মো. হিজবুল্লাহ ৪র্থ, মো. ইসলাম ৫ম, শাহাব উদ্দিন ৬ষ্ট, নাছির উদ্দিন ৭ম, একরাম উল্লাহ ১০ম (ক), মো. হুবাইব ১১তম (ক), মো. আবদুল্লাহ ১৪তম, মো. রাশেদ ৫তম, মো. একরাম ২৩তম, সাদেক হোছাইন ২৪তম (খ)। জমাতে হাপ্তুমের দায়িত্বশীল শিক্ষক ছিলেন মাও. দিল মোহাম্মদ।
জমাতে নাহুমে বোর্ড সেরা সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া ৬৪ জনের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকারী মো. মাহিদুর রহমানসহ ১৯ জনই লেদা ইবনে আব্বাস (রা.) আল-ইসলামিয়ার ছাত্র। এরা হলেন মো. মাহিদুর রহমান প্রথম, মো. শোয়াইব ৪র্থ (খ), মোশাররফ হোছাইন ৫ম, মো. ইউশা ৬ষ্ট, মো. শাহেদ ৭ম, মো. ফাহাদ ১০ম, মো. আনাস ১১তম (ক), মো. ইউশা ১৩তম, মো. ফরিদ ১৪তম (ক), নুর তাহের ১৫তম, মো. মসউদ ১৭তম, জামাল উদ্দিন ২৩তম (খ), কামরুল ইসলাম ২৪তম (খ), জাহেদ উল্লাহ ২৬তম (গ), নুর খান ২৬তম (ঘ), মো. সুহাইল ২৭তম, আমিন মোস্তফা ২৯তম, এরশাদ হোছাইন ৩১তম (ক), আবদুল খালেক ৪০তম (খ)। উক্ত জমাতে নাহুমের দায়িত্বশীল শিক্ষক ছিলেন মাও. মুফতী মো. ইসমাইল। বিগত কয়েক বছর ধরে অনুষ্টিত হয়ে আসছে এ পরিক্ষা। প্রতিযোগিতামুলক এ পরিক্ষার জন্য ক্বওমী মাদ্রাসা সমুহে শিক্ষার্থীদের মাঝে আলাদা একটা আকর্ষন পরিলক্ষিত হয়। লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধিসহ দক্ষতা অর্জনে এ পরিক্ষা সহায়ক ভুমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ তাহফীজুল কুরআন সংস্থা
পবিত্র কুরআন হেফজ সমাপ্তকারী ছাত্রদের নিয়ে অনুষ্টিত কেন্দ্রীয় পরিক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১২ জন ছাত্র। এতে শতভাগ পাশসহ ১ জন হাফেজ সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তিনি হলেন হ্নীলা পানখালী গ্রামের মাও. মো. রফিকের পুত্র হাফেজ মো. আবরার।
আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস (মরকজী পরিক্ষা)
একই মাসে অনুষ্টিত হয়েছিল আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের বহুল পরিচিত মরকজী পরিক্ষা। এতে জমাতে হাস্তমের সারা দেশের ইত্তেহাদভুক্ত কয়েক হাজার মাদ্রাসার অসংখ্য পরিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে লেদা ইবনে আব্বাস মাদ্রাসার ৮ জন ছাত্র। এরা হলেন ১২/১তম মো. শুয়াইব, ৩৩/১তম মো. আসআদ, ৩৮/১তম মো. আবু নাঈম, ৩৭/১তম মো. সা’আদ, ৩৯/২তম নুর কায়সার, ২৬/১তম আবু বকর, ৩৬/৩তম মো. আরমান, ৪১/১তম খুবাইবুর রহমান। উক্ত জমাতে হাস্তমের দায়িত্বশীল শিক্ষক ছিলেন মাও. মো. বেলাল উদ্দিন (০১৮৩৪৬৩৬৭৩৩)। তাঁর বাড়ি উখিয়া উপজেলার ইনানী।
জমাতে শশুমে সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে ২ জন। তারা হলেন ৪/১তম মো. ইয়াসির ও ১৮/১তম সুহাইল। উক্ত জমাতের দায়িত্বশীল শিক্ষক ছিলেন মাও. মুফতী ছাবেত।
জমাতে ছাহারুমে অংশ নিয়ে সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান না পেলেও শ্রেষ্টত্ব অর্জন করেছে। উক্ত জমাতের দায়িত্বশীল ছিলেন মাও. রফিক।
জমাতে দাহুমে সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে ১১ জন। তারা হলেন ২৭/১তম নুরুল আবসার, ২০/১তম নুর ফায়সাল, ৩/১তম ছৈয়দুল করিম, ১৪/৩তম ইব্রাহীম, ২২/২তম ইউনুছ, ২০/২তম রাকিবুল ইসলাম, ১৮/১তম শাহ রিয়াজ, ২৩/১তম জন্নাতুল্লাহ, ৩৮/১তম খালেদুল ইসলাম, ৫২/১তম মো. ফারুক, ৪৬/১তম ওমর ফারুক। উক্ত জমাতের দায়িত্বশীল শিক্ষক ছিলেন মাও. মোহাম্মদ।
নুরানী বোর্ড
নুরানী বোর্ডের কেন্দ্রীয় সনদ পরিক্ষায় নুরানী বিভাগের ৩য় শ্রেনীর ৬৪ জন ছাত্র-ছাত্রী পরিক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এতে শতভাগ পাশ ছাড়াও ৫৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। এরা হচ্ছে মো. মোরশেদ, মো. আরমান, মো. আফনান, মো. ইরফান, মো. সুলাইমান, মো. শাহেদ, মো. আনাস, মো. ইয়াসের, আরাফাত রহমান, ওসমান গণি, মোহাম্মদ বিন মারুফ, মো. আমিন, শাহাদত হোছাইন শাহেদ, মুহাম্মদ সেহে রহমান, মো. আরাফাত, মো. আসাদ আলম, মুহাম্মদ ইয়াসের, মো. আরিফ, ইয়াসির আরাফাত, রবি আলম, নুর সাদেক, মো. খুবাইব, মুহাম্মদ আরমান ইলাহী, মো. আরমান, মো. জিহাদ, মো. হুমায়ুন আজাদ রণি, শাকেরা আক্তার সুমি, রেশমা আক্তার, নুর হেনা নাসরিন মাহিয়া, মোকাররমা, সুফাইদা, সাইমা ইসলাম আখিঁ, ফারজানা ইয়াসমিন, তাসফিয়া মোমিন ইসরাত, জিসমা আক্তার, আকলিমা আক্তার, নুসরাত জাহান মারিয়া, আসমা আক্তার, রাহমা, নাহিদা আক্তার, হালিমা তাজমিন সাকি, শাহিদা আক্তার, ফাজানা আক্তার, ইশরাত ফাতেমা, উম্মে কুলসুম, মাহিয়া খানম রেশি, নাহিদা আক্তার, তাসরিফা আলম পাপিয়া, শারমিন আক্তার, নাদিয়া সুলতানা তাহিয়া, রেশমিন আক্তার, নুর ফাতেমা নিহা, ইশফা মণি, উম্মে হাফসা, সুফিয়া বিবি, নুরা, সাদিয়া আক্তার, তানিয়া মণি। প্রতি বছর একইভাবে ঈর্ষণীয় ফলাফল অর্জন করে আসছে। নুরানী বিভাগের দায়িত্বশীল হলেন মাও. মো. শব্বির (০১৮১২৫৬২৬৮২)। তাঁর বাড়ি হ্নীলায়।
লেদা ইবনে আব্বাস (রা.) আল-ইসলামিয়ার তত্বাবধানে পরিচালিত ‘হালিমাতুস সা’দিয়া (রা.) বালিকা মাদ্রাসা প্রতিষ্টার পর বালিকা হিফজখানাও চালু করা হয়েছে। বালিকা শাখায় শ্রেনীও বৃদ্ধি করা হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্ঠনী ও মনোরম পরিবেশে অবস্থিত আবাসিক এই বালিকা হিফজখানার সেমিপাকা ভবন, শিক্ষিকা-ছাত্রীর আবাসন, টয়লেট, অজুখানা নির্মাণ ও মহিলা শিক্ষিকা-হাফেজা শিক্ষিকা দিয়ে লেখাপড়া চলছে। বর্তমানে সকল বিভাগে পুরোদমে ভর্তি চলছে। প্রতিষ্টাতা পরিচালক আলহাজ্ব মাও. ক্বারী শাকের আহমদের এই ব্যয়বহুল মহতী ও সাহসী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে এলাকাবাসী দ্বীনি স্বার্থে মাদ্রাসার উন্নয়নে দানশীল দেশী-বিদেশী শুভাকাংখীদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। ##