ফেব্রুয়ারী মাসেও পর্যটক চালু রাখার দাবিতে সেন্টমার্টিনদ্বীপবাসীর মানববন্ধন

Oplus_131072

নুর মোহাম্মদ, সেন্টমার্টিনদ্বীপ থেকে :> ফেব্রুয়ারী মাসেও পর্যটক চালু রাখার দাবিতে সেন্টমার্টিনদ্বীপবাসীর মানববন্ধন। সরকারের সিদ্ধান্ত মতে ৩১ জানুয়ারী চলতি সিজনে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের ভ্রমণ বন্ধ হতে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের এমন সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ সেন্টমার্টিন দ্বীপে স্থানীয় বাসিন্দারা।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাজারস্থ এলাকায়, আজ ৩০ জানুয়ারী, সকাল ১০ঘটিকায় একটি মানববন্ধন ও প্রতিবাদী মিছিল বের করে দ্বীপটির স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে বলা হয়, ফেব্রুয়ারী মাসেও পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণ উন্মুক্ত রাখা হোক। মানববন্ধনে বক্তারা আরও বেশ কিছু দাবিদাওয়া তুলে ধরেন। -সদ্য গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারী মাসের ন্যয়, ফেব্রুয়ারী মাসেও পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হবে। -ফেব্রুয়ারী মাসের পর অফ সিজনে, স্থানীয় বেকার যুবকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে প্রতিটি পরিবার, আগামী ৯মাস পর্যন্ত অভাব দুঃখদুর্দশায় না থাকে। -অফ সিজনেও দ্বীপে প্লাস্টিক ও ময়লা আবর্জনা পরিস্কার ও নিষ্কাশনের কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। -অফ সিজনে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যাদী মজুদের ব্যবস্থা করতে হবে। -দ্বীপের একমাত্র হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রম পুরো অফ সিজনে চালু রাখতে হবে। প্রতি পর্যটন সিজন শুরু হয়ে থাকে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত। ভরা মৌসুম হিসেবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ধরা হয়। প্রতিবছর সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের ঢল নামলেও চলতি পর্যটন মৌসুমে জানুয়ারী মাসের শেষ অন্তেও সেন্টমার্টিন দ্বীপে নেই পর্যটকদের ঢল। সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক সীমিতকরণ ও দুইমাস যাতায়াত করার সময় বেঁধে দেওয়ায় কমেছে পর্যটকদের আনাগোনা। একজন পর্যটককে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণ করতে গেলে প্রথমে লাগে অনলাইন ট্রাভেল পাস, এরপরে জাহাজ টিকিট পাওয়ার জন্য যুদ্ধ। দুই হাজার পর্যটক সীমিত করার কারণে অধিকাংশ জাহাজ টিকিট সিন্ডিকেট গ্রুপের কব্জায় চলে যায়। যার কারণে আরও ভোগান্তিতে পড়তে হয় পর্যটকদেরকে। টিকিট পেলেও কিনতে হয় দিগুণ টাকা দিয়ে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মায়ানমার সীমান্তে অনিরাপদের কারণে পর্যটকবাহী জাহাজগুলোকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচল অনুমতি দেওয়া হয়নি। যারফলে কক্সবাজার থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে আসাযাওয়া করতে হয় পর্যটকদেরকে। গত বছরের পর্যটন মৌসুমে জাহাজগুলো চলাচলের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কক্সবাজারের ইনানী সংলগ্ন নৌবাহিনীর জেটি ঘাট হতে। তখন পর্যটকবাহী জাহাজ গুলোর সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌছাতে সময় লাগতো ৪ঘন্টা মতো। ঘূর্ণিঝড়ে সাগরের ঢেউয়ের তান্ডবে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা আর সংস্কার করতে করা হয়নি। যারফলে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ গুলোকে চলাচল করতে হয় কক্সাবাজার শহরের দুনিয়ার ছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট হতে। এতে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌছাতে সময় লেগে যায় ৬-৭ঘন্টা। একদিকে পর্যটকদেরকে হয়রানি করা, অন্যদিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীনে পড়েছে দ্বীপটির সাথে জড়িত নানান পেশার জনসাধারণ। দ্বীপটির স্থানীয় বাসিন্দারা মূলত চারমাস আয়রোজগার করে বারমাস জীবনযাপন করতো। আর সেখানে পর্যটক সীমিতকরণ ও দুইমাস সীমাবদ্ধতা করে দেওয়ায় অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন যাপন করছে দ্বীপটির স্থানীয় সাধারণ জনসাধারণ। যেখানে একটি ক্ষুদ্র দোকানে গত মৌসুমে বিক্রি হতো ৫-৬হাজার টাকা, আর সেখানে এখন বিক্রি হয় হাজার বারোশ টাকা মাত্র। এই অল্প ব্যবসাতে সন্তুষ্ট নয় দ্বীপের ব্যবসায়ীরা। এই অল্প ব্যবসাতে কর্মচারীর বেতন, প্রতিষ্ঠানের মেইনটেইনেন্স খরচ বাদ দিলে জমানত স্বরূপ কোন অর্থই থাকেনা। যারফলে অফসিজনে পরিবারের ভরণপোষণ দেওয়া, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করার খরচ বহন করা, চিকিৎসা নেওয়া যা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। আগামী দীর্ঘ ৯মাস অফসিজনে জীবন যাপন করা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। দ্বীপের প্রতিটি সেক্টরে এখন নীরব দুর্ভিক্ষ ও অনিশ্চয়তার নামেমাত্র ব্যবসা চলছে। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেন্টমার্টিনে নভেম্বর মাসে পর্যটক যেতে পারবেন, তবে রাত্রিযাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারবেন। ফেব্রুয়ারিতে সেন্টমার্টিনে পর্যটন পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। তখন সেন্টমার্টিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে। পরবর্তীতে একটি গেজেটও প্রকাশিত হয়।