হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :> টেকনাফে অপহরণ রোধে পাহাড়ে সাঁড়াশি অভিযান ও অস্থায়ী সেনা ঘাঁটির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছে টেকনাফের সর্বস্তরের জনসাধারণ। ১৫ দিনের মধ্যে দাবি মানা না হলে উখিয়া টেকনাফ মহাসড়ক বন্ধের হুশিয়ারি দিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছে তাঁরা। ‘টেকনাফের সর্বস্তরের নাগরিক’ ব্যানারে এই কর্মসুচী পালন করা হয়।

মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারী দুপুরে টেকনাফ ঝর্ণা চত্বরে এ কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে মানবন্ধনে অংশ নেন বিভিন্ন পেশাজীবী, অপহরণের শিকার পরিবার, রাজনীতিবিদসহ আরও অনেকে। টেকনাফে অপহরণের ঘটনা আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে দশ লক্ষাধিক মানুষ। এ অবস্থায় টেকনাফের পাহাড়ে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযান এবং অস্থায়ী সেনাঘাঁটির দাবিতে মানববন্ধন করেন সর্বস্তরের মানুষ। দাবি পূরণে জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও অপহরণকারীদের রোধে অস্থায়ী ঘাঁটি ও নিয়মিত যৌথ অভিযান পরিচালনা, অপহরণ চক্রের সাথে জড়িত অপরাধীদের দ্রæত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সীমানায় কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রোহিঙ্গাদের স্থানীয় জনপদে অবাধ বিচরণ বন্ধ করা, স্থানীয় এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার এবং পাহাড়ি এলাকায় ড্রোনসহ নজরদারি ব্যবস্থা চালু করা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করা, রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি এবং ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

মানবন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের নাগরিক, এবং টেকনাফ সীমান্তের মানুষ হিসেবে অধিকার হারা। আমরা কোন অপরাধ করি নাই। রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশী আমরা রোহিঙ্গা হয়ে গেছি। তারা আমাদেরকে অপরণ করে ব্যবসা করছে। এখান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। আমাদের দাবি, সবাই মিলে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দ্রæত গ্রেফতার করুন। আমাদের একটাই দাবি পাহাড়ে সেনা মোতায়েন করে এবং সেনাঘাঁটি চাই। আপনারা দেশের নাগরিকদের জন্য আইন বাস্তবায়ন করে দেখান। বিগত সরকারের সময় এই চক্রের সঙ্গে কিছু প্রভাবশালীর সখ্যতার অভিযোগ ছিল। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এসেও তা বন্ধ না হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বেড়েছে বহুগুণ। তাই টেকনাফের মানুষ মনে করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা না হলে এই ভয়াবহ অপরাধ রোধ করা সম্ভব নয়। আজ থেকে আগামী ৫ ফেব্রæয়ারীর মধ্যে যদি কোন কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে টেকনাফের সব সরকারি অফিস এবং সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হবে। টেকনাফের বাসিন্দারা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় এবং আতঙ্কে রয়েছেন। দুর্গম পাহাড় ঘিরে কয়েকটি স্বশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে। যাদের সংখ্যা ৩-৪ শ মতো। তারা পাহাড়ে পাহাড়ে তৈরি করেছে বিশেষ আস্তানা। কিছু স্থানীয় বাসিন্দার আশ্রয় প্রশ্রয়ে চলছে এমন অপরাধ। তাই আমাদের জোর দাবি, যৌথ বাহিনীর অভিযান এবং পাহাড়ে রাঙামাটির মতো সেনা ঘাঁটি। আমাদের চেয়ে প্রশাসন অনেক কৌশলী। কারণ তাদের হাতে আমাদের চেয়ে ভালো তথ্য থাকে। এত কিছু জানার পরও কেন আইনশৃংখলা বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছেনা তা রহস্যজনক। তাদের গাফিলতি থেকে বুঝা যায় অপহরণকারীদের সঙ্গে তাদের আঁতাত রয়েছে। অপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত না করে আমাদের নিরাপত্তা দিন’।
বিশাল মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটি টেকনাফ উপজেলা সদস্য সামিরা আকতার, ছাত্র প্রতিনিধি মো. মোর্শেদ, জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মো. আবদুল্লাহ প্রমুখ। ##