হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ : টেকনাফ থেকে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৬৬ জন মানব পাচারের ভিকটিম উদ্ধার, ৫ জন দালাল গ্রেফতার এবং আসামীদের হেফাজত হতে ৪ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ও ১টি রামদা ও ১টি কিরিচ উদ্ধার করেছে। ২৯ ডিসেম্বর ভোররাতে টেকনাফ থানাধীন বাহারছড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম কচ্চপিয়া সাকিনস্থ কবরস্থান সংলগ্ন কচ্চপিয়া পাহাড়ের উপর আব্দুল আমিনের অস্থায়ী তাবু ঘর হতে এসব উদ্ধার এবং আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার এসআই (নিরস্ত্র) বদিউল আলম (বিপি-৮৫০৫১০৪৭৬১) বাদী মামলা রুজু করেছেন। এতে ধৃত ৫ জন দালাল ছাড়াও ৭ জনকে পলাতক আসামী করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন টেকনাফ পৌরসভা ৮ নম্বর ওয়ার্ড শিলবনিয়া পাড়া আবদুস শুক্কুরের পুত্র রাশেদ (২৫), বাহারছড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ড কচ্চপিয়া সুলতান আহমদের পুত্র সালেহ আহমদ (৩৫) ও নুরুল কবির (২৭), একই গ্রামের রশিদ আহমদের পুত্র সৈয়দ আলম (২৪), চট্রগ্রাম জেলার সন্ধীপ গাছুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ইমান আলী চৌকিদার বাড়ী আবদুল গফুরের পুত্র কামরুল ইসলাম প্রকাশ মো. শিপন (৩২) বর্তমান অবস্থান শশুর বাড়ী টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের কোয়াইনছড়ি পাড়া। পলাতক আসামীরা হলেন টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কচ্ছপিয়ার নুর হোসেনের পুত্র কেফায়েত উল্লাহ (২৭), মমতাজের পুত্র আব্দুল আমিন প্রকাশ জসীম (৪০), কচ্ছপিয়া করাচি পাড়ার মোহাম্মদ হোছনের পুত্র সুলতান আহমদ (৩৬), হোছন আলীর পুত্র নুর মোহাম্মদ (৪৪), মৃত কবির আহমদের পুত্র ছৈয়দুল হক (৪০), জাফর আলমের পুত্র মোহাম্মদ জয়নাল (২৭), সাবরাং আলীর ডেইল অজ্ঞাতনামার পুত্র আব্দুল আমিন (৩৫) এবং অজ্ঞাতনামা ৯/১০ জন।
টেকনাফ মডেল থার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, মামলার বাদী এসআই (নিরস্ত্র) বদিউল আলম সঙ্গীয় অভিযান পার্টির অফিসার ফোর্সসহ টেকনাফ মডেল থানা এলাকায় অভিযান ডিউটি করাকালে ২৯ ডিসেম্বর গোপন সংবাদ পান টেকনাফ থানাধীন বাহারছড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম কচ্চপিয়া সাকিনস্থ কবরস্থান সংলগ্ন কচ্চপিয়া পাহাড়ের উপর আব্দুল আমিনের অস্থায়ী তাবু ঘরে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা জোর পূর্বক কিছু পুরুষ, নারী ও শিশুদেরকে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে আটক করে রেখেছে। উক্ত সংবাদটি তাৎক্ষনিক টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জকে অবগত করে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে সঙ্গীয় অফিসার ফোর্স এবং থানা এলাকায় মোবাইল-৭ নৈশ্য ডিউটির অফিসার-ফোর্সদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এজাহারনামীয় আসামীগনসহ অজ্ঞাতনামা আসামীগণ দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সদের সহায়তায় রাশেদ (২৫), সালেহ আহাম্মদ (৩৫), নুরুল কবির (২৭), সৈয়দ আলম (২৪), কামরুল ইসলাম প্রকাশ মো. শিপনকে (৩২) ধৃত করতে সক্ষম হন। অন্যান্য আসামীগণ পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ভিকটিম ও সাক্ষীদের সম্মুখে ধৃত আসামীদের দেহ তল্লাশীকালে ১ নম্বর আসামী রাশেদ (২৫) এর পরিহিত হাফ প্যান্টের ডান পকেট হতে ৪টি রাইফেলের গুলি, যাহার প্রত্যেকটি গুলির পারকিউশন ক্যাপের পিছনে অস্পষ্ট লেখা আছে, ২ নম্বর আসামী সালেহ আহমদের (৩৫) হাতে থাকা ১টি দেশীয় রামদা, যাহা কাঠের বাটসহ লম্বা অনুমান ৩৮ ইঞ্চি, লোহার অংশ-২৩ ইঞ্চি, ৩ নম্বর আসামী নুরুল কবিরের (২৭) হাতে থাকা ১টি কিরিচ, যাহা কাটের বাটসহ লম্বা অনুমান ২৯ ইঞ্চি, লোহার অংশ-১৭ ইঞ্চি জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করে ধৃত আসামী ও জব্দকৃত আলামত হেফাজতে গ্রহণ করেন। জব্দকৃত আলামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের হেফাজতে থাকা রামদা ও কিরিচ নিয়া ভিকটিমদের পাহারা এবং ভিকটিমদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলে স্বীকার করে। পরবর্তীতে বাদী সঙ্গীয় ফোর্সের সহায়তায় মানব পাচারের শিকার হওয়া পুরুষ-১৮ জন, মহিলা-১১ জন, শিশু-৩৭ জনসহ মোট ৬৬ জনকে উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত ভিকটিমদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের মধ্যে ৭ জন ভিকটিম টেকনাফ/উখিয়ার থানাধীন বিভিন্ন স্থানের বাংলাদেশী বাসিন্দা এবং ৫৯ জন ভিকটিম মায়ানমার রোহিঙ্গা নাগরিক ও টেকনাফ/উখিয়া রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা বলে জানায়। উল্লেখিত ভিকটিমদের আর্থ-সামাজিক অনগ্রসরতা ও পরিবেশগত অসহায়ত্বকে পুঁজি করে উন্নত জীবন-যাপন, অধিক বেতনে চাকুরী ও অবিবাহিত নারীদেরকে বিবাহের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা পূর্বক ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়া যৌন নিপীড়ন, প্রতারণামূলক বিবাহ ও জবরদস্তিমূলক শ্রমসেবা আদায়ের অভিপ্রায়ে ১০/১৫ দিন যাবৎ ধাপে ধাপে আসামীরা পরস্পর যোগসাজশে বর্ণিত ভিকটিমদের ঘটনাস্থলে এনে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য জোরপূর্বক আটক রাখে। ##