‘ব্যক্তি পরিবর্তন হলেও জুলুম-অত্যাচারের পরিবর্তন হয়নি’ … মুফতী ফয়জুল করীম

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্টের পর ব্যক্তির পরিবর্তন হলেও জুলুম-অত্যাচারের পরিবর্তন হয় নাই বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইসলামী আন্দোলন ভোলা জেলা উত্তরের আয়োজনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার বিচার, দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার ও সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে অনুষ্ঠিত গণ সমাবেশে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, জুলুম, অত্যাচার, চাঁদাবাজি ও বৈষম্য দূর করার জন্য ৫ আগস্ট মানুষ জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম বৈষম্য দূর করতে পারলে আমরা মুক্তি পাবো।

কিন্তু ৫ আগস্টের পর আমরা কি দেখলাম। আবারো সেই চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অন্যায়-অবিচার, দখলদারি ও নির্বিচারে হত্যা চলছে। 

তিনি বলেন, যেভাবে তেঁতুল গাছ লাগিয়ে আমের আশা করা যায় না তেমনিভাবে চোরের মাধ্যমে চুরিমুক্ত দেশ হতে পারে না। জালেমের মাধ্যমে জুলুমমুক্ত দেশ হতে পারে না, দুর্নীতিবাজের মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত দেশ হতে পারে না।

আমরা কি দেখতেছি, এসপি ও ডিসি সাহেব পরিবর্তন হয়, ঘুষ পরিবর্তন হয় না। ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু আদর্শ ও নীতির পরিবর্তন হয় নাই।

মুফতি ফয়জুল করিম আরো বলেন, ৫ আগস্ট মানুষ শাহাদাত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছে বৈষম্য দূর করার জন্য, নির্বিঘ্নে চাকরি করার জন্য, স্বাধীনভাবে ব্যবসা করার জন্য। আজকে আমরা কি দেখতেছি।

সেই ডাকাত, খুনি ও লুটেরা আবার ক্ষমতায় আসার চক্রান্ত করছে। এজন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সেই ব্যক্তি বা দলের মধ্যে চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজ আছে, তাদের দল আমরা করবো না। ওদেরকে ভোট দেব না এবং তাদের পেছনেও হাটবো না। 

তিনি বলেন, আপনার সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হন, তাহলে আগামীর বাংলাদেশে এমন এক সূর্য উদিত হবে; যেখানে বৈষম্য, জুলুম, অত্যাচার ও অবিচার থাকবে না।

প্রত্যেকটা মানুষ তার অধিকার ফিরে পাবে। আর সেই বাংলাদেশ হলো ইসলামী বাংলাদেশ। ইসলাম ব্যতীত বার বার দল ও নেতা পরিবর্তন করবেন, কিন্তু দুর্নীতি পরিবর্তন করতে পারবে না।

নতুন নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে মুফতি ফয়জুল করিম বলেন, যারা নতুন নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন, তাদেরকে বিগত নির্বাচন কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যদি আপনি ভালো নির্বাচন উপহার দিতে না পারেন, তাহলে বাংলাদেশের জনগণ কোনো অবস্থাতেই আপনাদের ক্ষমা করবে না। বাংলাদেশের জনগণ নিরপেক্ষ, নির্দলীয় ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। যে নির্বাচনে প্রত্যেক মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। যাকে পছন্দ করবে, তাকে যেন ভোট দিতে পারে-সেই ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনকে করতে হবে।

এসময় তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের পাশাপাশি ভোলার গ্যাস দিয়ে বরিশাল বিভাগে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার দাবি জানান। একইসঙ্গে ভোলা-বরিশাল সেতুরও দাবি করেন তিনি।

ইসলামী আন্দোলন ভোলা জেলা উত্তরের সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তরিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় গণ সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন-কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহা. সিরাজুল ইসলাম, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা ওবায়েদুর রহমান বিন মোস্তফা। গণ সমাবেশে সংগঠনটির স্থানীয় নেতারা বক্তব্য প্রদান করেন।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে ভোলা জেলার নেতারা মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।